রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার রাস্তায় পড়ে থাকা আনুমানিক দুই কোটি টাকা মূল্যের বিলাসবহুল গাড়িটির মালিকের পরিচয় পাওয়া গেছে। রোববার (১৮ আগস্ট) সকাল থেকে ধানমন্ডির বাইতুল আমান মসজিদের সামনের দিকের রাস্তায় দিনভর গাড়িটি পড়ে থাকলেও মালিক পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে গাড়িটি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান খান কামালের বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। নামিদামি ব্র্যান্ড ল্যান্ড ক্রুজারের গাড়িটি কে সেখানে ফেলে রেখে গেছে তা জানা যায়নি। জানা যায়, রোববার সকাল থেকে ঢাকা মেট্রো-ঘ ২১-৮৪৫৬ গাড়িটি রাস্তায় পড়ে ছিল। দিনভর গাড়িটি সেখানে থাকলেও মালিকের কোনো খোঁজ ছিল না। ওয়ারিশহীন গাড়িটি দীর্ঘসময় একইস্থানে থাকায় কে বা কারা গাড়িটির লুকিং গ্লাস খুলে নিয়ে যায়। অবশেষে দিবাগত মধ্যরাতে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় গাড়িটি র্যাকারে করে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়। শুরুতে গাড়িটির মালিকের নাম জানা না গেলেও পরে সেটি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বলে নিশ্চিত হয়েছে গণমাধ্যম। মূলত গাড়িটি কার এমন প্রশ্ন তুলে একজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।
ফেসবুকের ট্রাফিক অ্যালার্ট গ্রুপে জুনায়েদ কামাল নামে একজন গাড়িটি নিয়ে রাত একটার দিকে একটি পোস্ট দিয়ে লিখেছেন, ধানমন্ডির বাইতুল আমান মসজিদের সামনের দিকের রাস্তায় কেউ একজন ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি ফেলে গেছেন। রোববার সকাল থেকে গাড়িটি এখানে পড়ে আছে, গাড়িটি আনলক অবস্থায় আছে। কেউ কি এর মালিককে চিনেন প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকে গাড়িটি পড়ে ছিল। সারাদিন একইস্থানে গাড়িটি দেখে অনেকের সন্দেহ হয়। এরপর সামনে গিয়ে গাড়িটি আনলক অবস্থায় দেখা গেছে। তারা খুলে দেখেন কেউ নেই গাড়ির ভেতরে। জানাজানি হলেও গাড়ির মালিকের পরিচয় জানাতে পারেনি কেউই। অবশেষে অনেক খোঁজ দেওয়ার পর গাড়ির মালিকের পরিচয় জানতে পারে ঢাকা মেইল। কিছু তথ্য ও ছবি দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে গাড়িটি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের। গণমাধ্যমের কাছে আসা তথ্যে দেখা যায়, গাড়িটি কেনা হয়েছিল ২০২২ সালের ৩১ জুলাই। কিন্তু রেকর্ড আপডেট করা হয়েছে একই মাসের ২৮ জুলাই। ট্যাক্স টোকেন ইস্যু করা হয়েছে ২০২২ সালের ৩ আগস্ট। গত ৩০ জুলাই যার মেয়াদ শেষ হয়েছে। ট্রাস্টি সার্টিফিকেট ২০২৩ সালের ৩ আগস্ট। সেটিরও মেয়াদ গত ৩ আগস্ট শেষ হয়েছে। গাড়িটি ম্যানুফেকচার করার সময় ২০২২। গাড়িটির খালি ওজন ২ হাজার ২০০ কেজি আর মালামাল ৩ হাজার ২২০ কেজি পর্যন্ত তোলা সম্ভব। গাড়িটির ফিটনেস ইস্যু করা হয়েছে ২০২২ সালের ৩১ জুলাই। যার মেয়াদ রয়েছে ২০২৭ সালের ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত।
মালিকানাধীনের জায়গায় প্রাইভেট উল্লেখ করা হয়েছে। গাড়ির মালিকের নামের স্থানে আসাদুজ্জামান খান এবং তার বাবা মৃত আশরাফ আলী খান দেওয়া হয়েছে। আর গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা হয়েছে মিরপুর বিআরটিএ-তে। এছাড়াও গাড়িটি কেনার জন্য করের টিন নম্বরের জায়গায় (৫১১১১১২৫৫০৫৬) দেওয়া হয়েছে। মালিকের মোবাইল ফোন নম্বর হিসেবে দেওয়া হয়েছে-০১৭১১-৫৪১৫৬৯। সর্বশেষ গাড়িটি কেনার জন্য মালিকের যে নম্বর দেওয়া হয়েছে সেটির সূত্র ধরে ওই নম্বর ও পরিচয় সনাক্তকারী অ্যাপস ট্রু কলারে কল দেওয়া হয়। সেখানে আসাদুজ্জামান খানের নাম শো করে। এছাড়াও গাড়িটি যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তা আরও একটি ছবি দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, গাড়িটি কেনার সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তার সঙ্গে কয়েকজন ছবি তুলছেন। ছবিতে মন্ত্রী ছাড়াও ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের সাবেক ডিসি এইচএম আজিমুল হক এবং মন্ত্রীর কয়েকজন কাছের মানুষ উপস্থিত ছিলেন। তারা গাড়িটি কেনার পর শোরুমে একটি যৌথ ছবিও তোলেন। পাশে গাড়িটি রাখা ছিল। সেটির সামনে লাগানো উদ্ধারকৃত গাড়ির নম্বর প্লেটের সঙ্গে মিল রয়েছে।
গাড়িটির ব্যাপারে আরও নিশ্চিত হতে মধ্যরাতে আসাদুজ্জামান খান কামালের এলাকা তেজগাঁওয়ের কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চেনেন এমন কয়েকজন বলেন, তারা গাড়িটি ফেসবুকে দেখেছেন। গাড়ির নম্বর প্লেট দেখে চিনতে পেরেছেন এটি সেই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মন্ত্রী থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের সকল পর্যায়ের নেতারা আত্মগোপনে যান। গা ঢাকা দেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও। যদিও এখন পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের অনেক নেতার বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর গাড়িটি অন্য কোনো গ্যারেজে রেখেছিলেন চালক। কিন্তু সম্প্রতি অভিযান শুরুর পর আতঙ্ক বেড়ে গেলে যায়। ফলে চালক গাড়িটিকে ধানমন্ডির সেই রাস্তায় রেখে পালিয়ে গেছেন বলে স্থানীয় অনেকে ধারনা করছেন।